হাত পা ছাড়া জন্ম নেওয়া যশোরের সেই শারীরিক প্রতিবন্ধী লিতুন জিরার পড়াশোনা ও চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে লিতুনের পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়। এসময় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে লিতুন জিরার পরিবারের কাছে চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মকবুল হোসেন। চিকিৎসা আর পড়াশোনার জন্য অর্থ পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান লিতুন জিরার পরিবার।
এর আগে, গত ৩ মার্চ শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা পোষণ করে চিঠি লিখেন লিতুন জিরা। সেই চিঠি পেয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিতুনের খোঁজ খবর নেয়। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে প্রবেশের অনুমতি ও ৫ লাখ টাকার অর্থসহায়তা পাওয়ার বিষয়ে একটি চিঠি আসে লিতুনের বাড়িতে।
লিতুন জিরা যশোরের মনিরামপুর উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান ও জাহানারা বেগম দম্পতির মেয়ে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে ছোট লিতুন। লিতুনের বাবা হাবিবুর রহমান ওই উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এ আর মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক।
তিনি ১৮ বছর ধরে কলেজটিতে শিক্ষকতা করছেন। লিতুনের মা জাহানারা বেগম গৃহিণী। জন্ম থেকেই লিতুন জিরার দুটি পা নেই। দুই হাতও নেই কনুইয়ের ওপর থেকে। তবু লেখাপড়ার অদম্য চেষ্টা মেয়েটির। লেখার জন্য ডান হাতের বাহুর আগা দিয়ে কলম চেপে ধরে চোয়ালে। এভাবে লিখেই কৃর্তিত্বের সঙ্গে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে পড়াশোনা করছে মাধ্যমিকে। এবার সে উপজেলার গোপালপর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জেএসসি পরীক্ষা দেবে।
এর আগে ২০২০ সালে খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পাওয়ার সঙ্গে বৃত্তি পায় লিতুন জিরা। লিতুন জিরা শুধু পড়াশোনাতে কৃর্তিত্ব অর্জন করেছে, তা কিন্তু না! পড়াশোনার পাশাপাশি সে টানা দ্বিতীয়বারের মতো রচনা প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে পুরস্কার লাভ করেছে। এছাড়াও আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কান প্রতিযোগিতায় নিজের পারদর্শিতা দেখানোর পাশাপাশি খুলনা বেতারেও নিয়মিত গান ও কবিতা আবৃত্তির করে যাচ্ছে সে।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়ে খুশি লিতুন জিরা। তিনি বলেন, আমার যে কত খুশি লাগছে। আমার স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার। সেই স্বপ্ন পূরণে আমি ও আমার পরিবার সংগ্রাম করে যাচ্ছি। দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন হার না মানা এ উদ্যমী লিতুন জিরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লিতুন জিরার বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিবন্ধী বান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু লিতুন জিরার পাশে রয়েছে, তা কিন্তু না। দেশের সকল প্রতিবন্ধীদের প্রতি তিনি সবসময় সদয়। লিতুন তার ইচ্ছার কথা প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখলে তার পাশে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। আর সেই ইচ্ছার প্রেক্ষিতে লিতুনের চিকিৎসা ও পড়াশোনার জন্য ৫ লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি। এ টাকা দিয়ে লিতুনের চিকিৎসার পাশাপাশি পড়াশোনার জন্য সঞ্চয় করে রাখবেন বলে জানান তিনি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ে শিক্ষাবৃত্তির আবেদন করতে বলেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, লিতুনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজে ব্যস্ত থাকায় এবার সেটি হয়নি। পরে প্রধানমন্ত্রী দেখা করবেন বলে কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা তাদের জানিয়েছেন।
চেক গ্রহণকালে উপস্থিত ছিলেন মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম। তিনি বলেন, আমরা সবসময় উপজেলা প্রশাসন লিতুন জিরার খোঁজখবর রেখেছি। আমাদের প্রতিবন্ধী বান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছেন। আজকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে লিতুনের পরিবারের হাতে অনুদানের চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মাধ্যমে লিতুনের মতো অদম্য মেধাবীরা হাজারও মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে জানান তিনি।